শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে বর্ধিত ফি বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার রিপোর্ট

কুড়িগ্রাম জেলা দপ্তর:  
‘অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষা-২০১০’ -এর ফরম পূরণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৫০ টাকা নির্ধারণ করে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ উক্ত ফি নির্ধারণ করে ৩৪২৭ টাকা, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ১৪৭৭ টাকা বেশি। এখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফি’র চেয়ে দেড় হাজার টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শুধু বিজ্ঞান বিভাগই নয়; মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও অতিরিক্ত ১৪০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ৫০০-৮০০ টাকা (‘অতিরিক্ত শিক্ষক’ ও অন্যান্য বাবদ) বেশি উত্তোলন করা হলে বিষয়টি হয়ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হত। কিন্তু এ-ই পরিমাণ অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অত্র কলেজের উপাধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করতে গেলে এ বিষয়ে কোন রকম আন্দোলন-সংগ্রাম না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে কারো কাছে জবাবদিহি করতে তিনি বাধ্য না।

গত ২৩ জুলাই অতিরিক্ত ফি দেয়া নিয়ে সাধারন ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হলে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সাধারন ছাত্রদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে অর্ধদিবস ফরম পূরণ থেকে বিরত থাকাকালীন সময়ে কলেজ প্রশাসনের ইন্ধনে, উপাধ্যক্ষ তোফায়েল হোসেন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোখলেছুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকের উপস্থিতিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম আইয়ুব নির্দেশে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ওয়াহেদুন্নবী সাগরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ক্যাডারবাহিনী প্রগতিশীল ছাত্রজোট নেতৃবৃন্দের উপর হামলা চালায়, ব্যাপক মারধর করে। এতে আহত হন ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার আহ্বায়ক ছাত্রনেতা নিরঞ্জন চন্দ্র রায়, ছাত্রফ্রন্টকর্মী আতিকুর রহমানসহ অনেকে। গুরুতর আহত অবস্থায় আতিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং নিরঞ্জনকেও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট তৎক্ষণাত শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং কলেজ মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা মোকলেছুর রহমান, ছাত্রফ্রন্টকর্মী গৌতম কুমার, স্বপন প্রমুখ। সমাবেশে বর্ধিত ফি অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। সমাবেশ চলাকালে আবারো ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী হামলার চেষ্টা করতে কথা কাটাকাটি হয়, গণপ্রতিরোধের মুখে তারা পালাতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ে সদর থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার না করায় বাধ্য হয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট নেতৃবৃন্দ পরদিন ২৪ জুলাই আবারো দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চাইলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আবারো অতর্কিত হামলা চালায়। মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর এই হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ছাত্রফ্রন্টকর্মী কামরুন্নাহার কেয়া, স্বপন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক সাম্য রাইয়ান। এসময় আরো আহত হন ছাত্রনেতা নিরঞ্জন চন্দ্র রায়, খোকন সরকার, গৌতম কুমার, মৌসুমী আক্তার বুবলীসহ অনেকে, সকলকেই কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সকল ঘটনারই বিস্তারিত বিবরণ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়।

এমতাবস্থায় গত ২৫ জুলাই কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে, বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়াসহ সন্ত্রাসীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কুড়িগ্রাম জেলা সিপিবি ও বাসদ যৌথভাবে শহরে বিশাল লালপতাকা মিছিল করে ডিসি অফিস ঘেরাও, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করে। এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি কমরেড মাহাবুবার রহমান মমিন, আক্তারুল ইসলাম রাজু, বাসদের ফুলবর রহমানসহ প্রমুখ।

এতোকিছুর পরও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা গত ৩১ জুলাই কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সমবেত হয়ে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান অধ্যক্ষ’র সাথে আলোচনার জন্য। অধ্যক্ষ বিষয়টিকে ‘অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনেরও আশ্বাস দেন।

সদর থানায় বারবার চেষ্টা করার পরও যখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা রুকনুজ্জামান রুকু বাদী হয়ে ১ আগস্ট অজ্ঞাত ১৮ জন সহ মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করেন।


(৩ আগস্ট ২০১২)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন