বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস নয়, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালন করুন



১৯৮২ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা মিছিল বের করলে সামরিক স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে ছাত্রদের লাঠিচার্জ করে। স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের সূত্রপাত।

১৯৮৩ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা মিছিল বের করলে সামরিক স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে ছাত্রদের লাঠিচার্জ করে। স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের সূত্রপাত।

১৯৮৩ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা মিছিল বের করলে সামরিক স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে ছাত্রদের লাঠিচার্জ, নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৪টি ছাত্র সংগঠন মিলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে।

মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবীতে আন্দোলন এগিয়ে চলে।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচীর প্রচারে একটি পোষ্টার।

১৪ ফেব্রুয়ারির মিছিলে বাধা দিতে প্রস্তুত পুলিশ।

ছাত্রদের আন্দোলন শুধু শিক্ষানীতি নয় সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রূপ নেয়।

ছাত্রদের মিছিলে বাধা দিতে পুলিশের রাস্তায় ব্যারিকেড। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সচিবালয় অভিমূখে মিছিল এগিয়ে চলছে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সচিবালয় অভিমূখে মিছিলের পূর্বে কলাভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ব্যারিকেড ভেঙ্গে মিছিল এগিয়ে নেবার প্রস্তুতি।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ব্যারিকেড ভাঙছে ছাত্ররা।

১৯৮২ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের হামলা।

১৯৮২ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের হামলা ও লাঠিচার্জ।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত সতীর্থের লাশ ঘিরে আছে ছাত্ররা। সেদিন ও তার পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে ১০ জন নিহত হয়, গ্রেফতার হয় কয়েক হাজার।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। এগিয়ে চলেছে ছাত্রদের মিছিল।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরা যোগ দেয় মিছিলে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের ছাত্র জনতা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের ছাত্র জনতা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে।

সময়টা ১৯৮৩। ১৪ ফেব্র“য়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ছাত্র জমায়েত। মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে এই ছাত্র জমায়েত। সেটাই পরিণত হল বুট ও বুলেটের দমনে পিষ্ট জসতার এক বিরাট প্রতিরোধে। জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে প্রাণ দিল ১০ জন। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ চেতনার দিন। দিনটি পালিত হতো স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে।
একাত্তরে মানুষ অকাতরে রক্ত মুক্তির জন্য। বিনিময়ে পেল নতুন এক ফ্যাসিস্ট শাসন। শাসক শ্রেণীর দল-উপদলগুলোর মধ্যে প্রথম দিন হতে শুরু হয় ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি। বাকশালী শাসন, সামরিক গণতন্ত্র শেষে শাসক শ্রেনী জনগণকে উপহার দিল সামরিক স্বৈরাচার। দেশে এখন চলছে পার্লামেন্টারি স্বৈরাচারের দিন। আগুনে পুড়িয়ে ও নির্বিচারে গুলি করে শ্রমিক হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে আইনি খুন, রূপগঞ্জ-আড়িয়াল বিলে ভুমি দখল, পাহাড়ে গনহত্যা, উপনিবেশিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ভারতের সাথে তাবেদারীর চুক্তি, কয়লা নীতি, মডেল পিএসসি-র মধ্য দিয়ে বিদেশীদের হাতে দেশের জাতীয় সম্পদ তেল-গ্যাস-কয়লা তুলে দেয়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, পাকিস্তান কালেও এ দেশে যা সম্ভব হয়নি সেই মার্কিন সামরিক উপস্থিতি এমন নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হয়ে শাসক শ্রেনীর স্বেচ্ছাচারিতা চরমে পৌঁছেছে।
দেশে যখন জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম দানা বাঁধতে শুরু করেছিল তখন পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী জাতির চেতনাকে নড়বড়ে করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। ভাষা-শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন চালিয়ে। তারা বিজাতীয় ভাষা উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা লক্ষ্য করলাম, তেমনি ভাবে পার্লামেন্টারি স্বৈরাচারের আমলে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস-এর চেতনাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হল শাসক শ্রেণী।
সামরিক স্বৈরাচারের কয়েক বছর না যেতেই ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসাবে পালনের জন্য শাসক শ্রেণীর অন্যতম মুখপত্র যায়যায় দিন প্রচার শুরু করে। পাকিস্তানিরা ’৫২তে ব্যর্থ হলেও, ক্যাবল আর স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে এবার শাসক শ্রেণী সফল হয়েছে। তারা ‘আমি আর তুমি’-র মত চরম স্বার্থপর, সমাজ বিচ্ছিন্ন চেতনা যুব সমাজের মধ্যে চাপিয়ে দিতে পেরেছে। প্রেম-ভালবাসার মত স্বাভাবিক সম্পর্ককে অতিপ্রাকৃত বিষয়ে পরিণত করে আফিম নেশার মত বুঁদ করে ফেলেছে। ভোগবাদ আজ তাদের আদর্শ।
শাসক শ্রেণী এ থেকে লাভ তুলে নিচ্ছে দু’ভাবে; সমাজের সবচেয়ে প্রাণবন্ত লড়াকু অংশ যুব সমাজকে মুক্তির লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন, নির্জীব করে ফেলে এবং দিনটিকে বাণিজ্যের মহোৎসবে পরিণত করে।
এদেশ, জাতি ও জনগণ মুক্তি পায় নাই কিন্তু তার মুক্তির আকাঙ্খা কখনো দমে নাই। তার লড়াই কখনো থামে নাই। 


(ছবিগুলো নেয়া হয়েছে গণআন্দোলনের এ্যালবাম থেকে এবং দিবস উপলক্ষ্যে প্রপদ এর লিফলেট এর অংশিক)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন