সময়টা ১৯৮৩। ১৪ ফেব্র“য়ারি ছাত্র সংগ্রাম
পরিষদের ডাকে ছাত্র জমায়েত। মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী
মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে এই ছাত্র জমায়েত। সেটাই
পরিণত হল বুট ও বুলেটের দমনে পিষ্ট জসতার এক বিরাট প্রতিরোধে। জাফর,
জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে প্রাণ দিল ১০ জন। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি
হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ চেতনার দিন। দিনটি পালিত হতো
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে।
একাত্তরে মানুষ অকাতরে রক্ত মুক্তির
জন্য। বিনিময়ে পেল নতুন এক ফ্যাসিস্ট শাসন। শাসক শ্রেণীর দল-উপদলগুলোর
মধ্যে প্রথম দিন হতে শুরু হয় ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি। বাকশালী শাসন,
সামরিক গণতন্ত্র শেষে শাসক শ্রেনী জনগণকে উপহার দিল সামরিক স্বৈরাচার। দেশে
এখন চলছে পার্লামেন্টারি স্বৈরাচারের দিন। আগুনে পুড়িয়ে ও নির্বিচারে গুলি
করে শ্রমিক হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে আইনি খুন, রূপগঞ্জ-আড়িয়াল বিলে ভুমি
দখল, পাহাড়ে গনহত্যা, উপনিবেশিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, ভারতের সাথে
তাবেদারীর চুক্তি, কয়লা নীতি, মডেল পিএসসি-র মধ্য দিয়ে বিদেশীদের হাতে
দেশের জাতীয় সম্পদ তেল-গ্যাস-কয়লা তুলে দেয়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি,
পাকিস্তান কালেও এ দেশে যা সম্ভব হয়নি সেই মার্কিন সামরিক উপস্থিতি এমন
নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হয়ে শাসক শ্রেনীর স্বেচ্ছাচারিতা চরমে পৌঁছেছে।
দেশে যখন জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম দানা
বাঁধতে শুরু করেছিল তখন পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী জাতির চেতনাকে নড়বড়ে করে
দেয়ার চেষ্টা করেছে। ভাষা-শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন চালিয়ে। তারা
বিজাতীয় ভাষা উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা লক্ষ্য করলাম, তেমনি ভাবে
পার্লামেন্টারি স্বৈরাচারের আমলে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস-এর চেতনাকে ধ্বংস
করতে উদ্যত হল শাসক শ্রেণী।
সামরিক স্বৈরাচারের কয়েক বছর না যেতেই
১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসাবে পালনের জন্য শাসক শ্রেণীর অন্যতম
মুখপত্র যায়যায় দিন প্রচার শুরু করে। পাকিস্তানিরা ’৫২তে ব্যর্থ হলেও,
ক্যাবল আর স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে এবার শাসক শ্রেণী সফল হয়েছে। তারা
‘আমি আর তুমি’-র মত চরম স্বার্থপর, সমাজ বিচ্ছিন্ন চেতনা যুব সমাজের মধ্যে
চাপিয়ে দিতে পেরেছে। প্রেম-ভালবাসার মত স্বাভাবিক সম্পর্ককে অতিপ্রাকৃত
বিষয়ে পরিণত করে আফিম নেশার মত বুঁদ করে ফেলেছে। ভোগবাদ আজ তাদের আদর্শ।
শাসক শ্রেণী এ থেকে লাভ তুলে নিচ্ছে
দু’ভাবে; সমাজের সবচেয়ে প্রাণবন্ত লড়াকু অংশ যুব সমাজকে মুক্তির লড়াই থেকে
বিচ্ছিন্ন, নির্জীব করে ফেলে এবং দিনটিকে বাণিজ্যের মহোৎসবে পরিণত করে।
এদেশ, জাতি ও জনগণ মুক্তি পায় নাই কিন্তু তার মুক্তির আকাঙ্খা কখনো দমে নাই। তার লড়াই কখনো থামে নাই।
(ছবিগুলো নেয়া হয়েছে গণআন্দোলনের এ্যালবাম থেকে এবং দিবস উপলক্ষ্যে প্রপদ এর লিফলেট এর অংশিক)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন