নাজিম হিকমত
তুমি বিক্রি করে দিয়েছ তোমার দৃষ্টিভঙ্গি
তোমার হাতের ঝলমল শ্রম
এই পৃথিবীর যা কিছু, সব তোমারই সৃষ্টি
কিন্তু তুমি কোন কিছুরই স্বাদ নাওনি জিভে।
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে অন্যের গোলাম হয়েছ
তুমি তোমার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে সৃষ্টি কর ক্রীসাস*
যারা তোমার মাকে প্রতিনিয়ত কাঁদায়,
তুমি স্বাধীন।
যে-মূহুর্তে তুমি ভূমিষ্ঠ হও
ওরা তোমার মাথায় চড়ে বসে,
তুমি যতদিন বেঁচে থাক
ওরা ওদের কারখানার মিথ্যে চাক দিয়ে
তোমার জীবনকে গুঁড়িয়ে চলে,
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে
আল্লার কাছে করজোড়ে দাঁড়াও,
তুমি চেতনার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তা কর
তুমি স্বাধীন।
তোমার মাথাটা ঝুলছে তোমার বুকের সামনে
যেন ঘার থেকে মাথাটা ছিন্ন
তোমার হাত দু’টি তোমার পাশে নির্বিকার ঝুলছে
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ
বেকার হওয়ার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে
তুমি স্বাধীন।
প্রিয় বন্ধুর মতো
তুমি তোমার দেশকে ভালোবাস,
হয়তো একদিন ওরা তোমার দেশকে বিক্রি করবে─
আমেরিকার কাছে,
আর তুমি,
তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকবে।
আর তোমারই স্বাধীনতার নামে বিমানঘাঁটি হবে
তোমার দেশের বুকে,
তুমি স্বাধীন।
ওয়ালস্ট্রীট একদিন তোমার টুঁটি টিপে ধরবে─
গুঁড়িয়ে দেবে তোমার হাত,
একদিন তারা তোমাকে কোরিয়াতে পাঠাবে
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে
নিশ্চিন্তে কবরে ঘুমোবে...
একজন অজানা সৈনিকের মতো তোমার স্বাধীনতা নিয়ে
তুমি স্বাধীন।
তুমি বল,
আমি বেঁচে থাকব,
শুধু একটা যন্ত্র হিসেবে নয়
একটা সংখ্যা হিসেবে নয়
একটা উপকরণ হিসেবে নয়
একজন মানুষের মতো আমি বেঁচে থাকব।
তোমার স্বাধীনতা আছে স্বাধীনতাকে বিদ্রুপ করার
জেলে যাবার
ফাঁসিতে ঝুলবার,
তুমি স্বাধীন।
তোমার জীবনের ওপর কোনো লৌহ-যবনিকা
কোন কাঠের জাফরি
কোন কারুকাজ করা পর্দা নেই
তোমার কোনো প্রয়োজন নেই
স্বাধীনতাকে কুড়িয়ে নেবার
সারাটা জীবনই তুমি স্বাধীন।
নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে
কী দুঃখেরই না এই স্বাধীনতা।
* ক্রীসাস─খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর লিডিয়ার একজন অতি ধনবান রাজা।
তুমি বিক্রি করে দিয়েছ তোমার দৃষ্টিভঙ্গি
তোমার হাতের ঝলমল শ্রম
এই পৃথিবীর যা কিছু, সব তোমারই সৃষ্টি
কিন্তু তুমি কোন কিছুরই স্বাদ নাওনি জিভে।
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে অন্যের গোলাম হয়েছ
তুমি তোমার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে সৃষ্টি কর ক্রীসাস*
যারা তোমার মাকে প্রতিনিয়ত কাঁদায়,
তুমি স্বাধীন।
যে-মূহুর্তে তুমি ভূমিষ্ঠ হও
ওরা তোমার মাথায় চড়ে বসে,
তুমি যতদিন বেঁচে থাক
ওরা ওদের কারখানার মিথ্যে চাক দিয়ে
তোমার জীবনকে গুঁড়িয়ে চলে,
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে
আল্লার কাছে করজোড়ে দাঁড়াও,
তুমি চেতনার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তা কর
তুমি স্বাধীন।
তোমার মাথাটা ঝুলছে তোমার বুকের সামনে
যেন ঘার থেকে মাথাটা ছিন্ন
তোমার হাত দু’টি তোমার পাশে নির্বিকার ঝুলছে
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ
বেকার হওয়ার অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে
তুমি স্বাধীন।
প্রিয় বন্ধুর মতো
তুমি তোমার দেশকে ভালোবাস,
হয়তো একদিন ওরা তোমার দেশকে বিক্রি করবে─
আমেরিকার কাছে,
আর তুমি,
তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকবে।
আর তোমারই স্বাধীনতার নামে বিমানঘাঁটি হবে
তোমার দেশের বুকে,
তুমি স্বাধীন।
ওয়ালস্ট্রীট একদিন তোমার টুঁটি টিপে ধরবে─
গুঁড়িয়ে দেবে তোমার হাত,
একদিন তারা তোমাকে কোরিয়াতে পাঠাবে
তুমি তোমার মহান স্বাধীনতা নিয়ে
নিশ্চিন্তে কবরে ঘুমোবে...
একজন অজানা সৈনিকের মতো তোমার স্বাধীনতা নিয়ে
তুমি স্বাধীন।
তুমি বল,
আমি বেঁচে থাকব,
শুধু একটা যন্ত্র হিসেবে নয়
একটা সংখ্যা হিসেবে নয়
একটা উপকরণ হিসেবে নয়
একজন মানুষের মতো আমি বেঁচে থাকব।
তোমার স্বাধীনতা আছে স্বাধীনতাকে বিদ্রুপ করার
জেলে যাবার
ফাঁসিতে ঝুলবার,
তুমি স্বাধীন।
তোমার জীবনের ওপর কোনো লৌহ-যবনিকা
কোন কাঠের জাফরি
কোন কারুকাজ করা পর্দা নেই
তোমার কোনো প্রয়োজন নেই
স্বাধীনতাকে কুড়িয়ে নেবার
সারাটা জীবনই তুমি স্বাধীন।
নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে
কী দুঃখেরই না এই স্বাধীনতা।
অনুবাদ: কমলেশ সেন
* ক্রীসাস─খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর লিডিয়ার একজন অতি ধনবান রাজা।
[কবি পরিচয়: তুরস্কের─ শুধু তুরস্কের নয়, সারা বিশ্বের এক বিরাট মাপের কবি নাজিম হিকমত জন্মগ্রহন করেন ১৯০২ খ্রি.। তিনি যে-ভাষায় কবিতা লিখতেন তা কোন বানানো ভাষা নয়, যে ভাষায় সাধারন মানুষ সুখ-দুঃখের কথা বলে, হাসে, ঘৃণা প্রকাশ করে, প্রিয়জনের কাছে চিঠি লেখে, সংঘ গড়ে তোলে, সংগ্রাম করে, অন্তরের মধ্যে পুষে রাখে ক্ষোভ, যে ভাষায় কোন অড়ম্বর নেই─একেবারে সাদামাটা ভাষা। এ-ভাষা─এই ভাষার উপমা তাঁর কবিতার অন্তর্দেহকে নির্মাণ করেছে। কবিতাকে এক নতুন মাত্রা ও বোধের জগতে নিয়ে গিয়েছে। মহান এই কবি ১৯৬২ খ্রি. ৩ জুন মস্কো শহরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন