রবিবার, ২৪ জুন, ২০১২

আমাদের অহংকার-আমাদের স্পর্ধিত উচ্চারণ

ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল

নিঃসন্দেহে আমার ও আমাদের এই প্রজন্মের প্রত্যেকের জীবনে এক বিশেষ মূহুর্ত হিসাবে ছাত্র ইউনিয়নের ষাট বছর আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সুদীর্ঘ পথ চলায় ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠন যে প্রজন্মের সৃষ্টি করেছে তারা এই দেশ জাতিকে-পৃথিবীকে উজাড় করে দিয়েছে তাদের মেধা-শ্রম-মননশীলতা। শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠায় ছাত্র ইউনিয়ন এক নজির সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্থান করে নিয়েছে নিরন্তর। নিপীড়িত-বঞ্চিত-শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্র ইউনিয়ন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম রক্তস্নাত ইতিহাস রচনা করেছে। এই জনপদে এমন কি কোন আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে যেখানে নীল পতাকার সৈনিকরা অকাতরে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেনি। আর কে আছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে এমন স্পর্ধিত অহংকার দেখাতে পারে।

বাংলাদেশের ইতিহাস আজ লিখিত হয় স্থূল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে। তাইতো আমরা দেখি প্রকৃত ইতিহাস-এদেশের মানুষের রক্তে-ঘামে, লড়াই সংগ্রামে যে ইতিহাস রচিত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বিকৃতভাবেই আমাদের সামনে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের ভুল পাঠ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস যদি লেখা হয় ছাত্র ইউনিয়ন সেই ইতিহাসের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে। অংশ হয়ে থাকবে তার অপরিসীম ভূমিকা ও অবদানের জন্য। ইতিহাসের বাঁক পাল্টে দেয়া ভূমিকা এদেশে আর কেউ তেমনভাবে নিতে পারেনি- যেভাবে ছাত্র ইউনিয়ন নিয়েছে। শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে শহর থেকে গ্রামে, গ্রামে স্কুল-কলেজে পৌঁছে দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের সৈনিকরা। ‘সবার জন্য শিক্ষা চাই’- প্রথম উচ্চারণ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এ জনপদে প্রথম অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে  উর্ধ্বে তুলে ধরেছে ছাত্র ইউনিয়ন। জাতিগত শোষণ-নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছাত্র ইউনিয়ন প্রথম স্বাধীনতার স্লোগান তুলেছিল ও হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। স্বাধীনতার সংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, সামরিক শাসনবিরোধী সংগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের অবদান দেশ-জাতি ভুলে যেতে পারে না। অসংখ্য শহিদের রক্তস্নাত এ সংগঠনটি গত ২৬ এপ্রিল তার ৬০ বছর উদযাপন করেছে। এ ষাট বছরের পথ চলা খুব মসৃণ ছিল না। বরং বন্ধুর পথ ধরেই এগিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। কিন্তু সমগ্র পথ চলায় ছাত্র ইউনিয়ন কখনো আপোষ করেনি─থেমে থাকেনি।

আজকে স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার মূল চেতনায় তাদের অধিকার পায়নি। শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতন মানুষের প্রতিদিনকার প্রাপ্তি। এদেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষা বঞ্চিত, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। স্বাধীন দেশ-ভূখন্ড আর মানচিত্র মিললেও, মেলেনি অধিকার। আইন-আদালতসহ সকল নাগরিক অধিকার শুধুমাত্র বড়লোকের জন্য। আমরাতো এই স্বাধীনতা─এই দেশ চাইনি। সাম্রাজ্যবাদ তার নীল নকশা নিয়ে এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-কৃষি-জাতিয় সম্পদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রকে পরিণত করা হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের বাণিজ্যিক কলোনীতে। এদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার পরিবর্তন করছে তারাই। ছাত্র ইউনিয়ন একটি শোষণহীন সমাজের জন্য তার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের আকাক্ষার একটি সমাজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই কেবল প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব।

৬০ বছরের আকাক্ষা
আজকে দেশের এক দূর্বিষহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা ছাত্র ইউনিয়নের ৬০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। আমরা যেমন আমাদের সংগ্রাম আর গৌরবগাথাঁ উচ্চারণ করতে চাই─ তেমনি চাই সেই পথ ধরে একটি আগামী নির্মাণ করতে। আজকে ছাত্র ইউনিয়ন পরিবারের কাছে জাতির প্রশ্ন─ এই পরিস্থিতিতে জাতিকে আবারো কি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারি না? শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র গণসংগঠন হিসাবে এদেশের সমগ্র ছাত্র সমাজকে নিয়ে যূথবদ্ধ সংগ্রাম রচনা করতে চায়। আর একই সঙ্গে চায় তার দীক্ষায় দীক্ষিত যে সকল নীল পতাকার সৈনিক দেশের সমগ্র জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তারা যূথবদ্ধ হবে এদেশকে শোষণমুক্ত করার সংগ্রামে।
আমরা ছাত্র ইউনিয়ন পরিবারের প্রতি আহবান জানাই─ আসুন আপনার প্রজন্মকে একই দীক্ষায় দীক্ষিত করে সমগ্র দেশে ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তুলি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ছাত্র ইউনিয়নকে পুনর্জাগরিত করার কোন বিকল্প নাই।
তাই শপথ নিই আগামী নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হবার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন