রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

আসন্ন বাজেটে গুরুত্ব পাক শিক্ষাখাত

লিটন চন্দ্র ভৌমিক
জাপানের NHK চ্যানেলে একটা সাক্ষাৎকারে অমর্ত্যসেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে – 'কিভাবে জাপানের জিডিপি দ্বিগুন করা যায়?' অমর্ত্যসেনসেন তাৎক্ষনিক উত্তর দিলেন- “শিক্ষাবাজেট দ্বিগুন করে দিন” সত্যিই শিক্ষার সাথে উন্নয়নের এত সরাসরি সম্পর্ক অর্থনীতির অন্যখাতের সাথে নেই। সেজন্য অমর্তসেন প্রায়শই বলেন- ‘উন্নয়ন চান; তাহলে স্কুল বানান’ ।।

আমাদের প্রত্যেকটি সরকার; মন্ত্রী- সাংসদ; সুশীলবৃন্দ; কলামলেখক; এনজিও; পুরষ্কারধারী কেবল উন্নয়ন- উন্নয়ন- উন্নয়ন বলে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল কাঁপান। ‘কিন্তু উন্নয়ন আর শিক্ষাবাজেটের বরাদ্ধ দৃঢ় সমানুপাতিক' এই বিষযটি কমই স্বীকার করেন ।। নিঃসন্দেহে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে হবে শিক্ষাবাজেটে; শিক্ষাখাতে একটাকা বিনিয়োগ করলে ফেরত আসে ৫৫ টাকা। আমাদের কেমন শিক্ষাবাজেট যেটা ১৬ কোটি জনগনের ৪ কোটিকেও স্পর্শ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্ধ নাই; স্কুল-কলেজে ব্যবহারিক খাতের আয়োজন নেই; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতের অস্তিত্বই নেই ।। যতটুকু বাজেট, তার সঠিক বন্টন নেই। ক্যাডেট কলেজের ছাত্রপ্রতি> ৳২৫০০০ ; গ্রামের স্কুলের >৳৫০০ ; গরীব মাদ্রাসা ছাত্রটির জন্য >৳৩০০ ।। সরকারী হিসাবে, আমাদের জিডিপি’র মাত্র ২.৪০% শিক্ষাখাতে ব্যয় হয় !! মূলত তাও নয়। ( আমাদের জিডিপি> ৳ ৯৬০২৫৬ কোটি টাকা; শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ> ৳১৯৮৭৩ কোটি টাকা; যা জিডিপি’র >২.০৬% )

কিউবা তার মোট জিডিপি’র ১৮.৭ ভাগ শিক্ষাখাতে ব্যয় করে ( আমাদের জিডিপি’র আয়তনে শিক্ষাব্যয়ের ৯.০৭ গুন !!) ।। ধনীদেশগুলোর মধ্যে, ডেনমার্ক> ৮.৫%; মালয়শিয়া> ৮.১%; সুইডেন >৭.৭%; নরওয়ে> ৭.৬%; ইসরায়েল> ১০% ........।। সবাই বলে, তারাতো ধনী; বিশাল বাজেট করবেই তো; কিন্তু গরীবদেশগুলোও জিডিপি’র আয়তনে শিক্ষায় বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই।। উজবেকিস্তান ১২%; ভানুয়াতু> ১১%; লোসোথো> ১০.৪%; সেন্টভিনসেন্ট> ১০%; মঙ্গোলিয়া> ৯%....... ।।
[[http://www.nationmaster.com/graph/edu_edu_spe-education-spending-of-gdp]]
দরিদ্র/ স্বল্পোন্নত/ উন্নয়নশীল দেশসমুহের জিডিপি’র আয়তনে শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ বাড়ানো আরো বেশী প্রয়োজন যেহেতু তারা মানব সম্পদ উন্নয়নে পিছিয়ে ।।

প্রায় প্রতি বছরেই বাজেটে শিক্ষা খাতে যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দানের বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়; সেখানে একটি শুভঙ্করের ফাঁকি থাকে। আজ পর্যন্ত প্রতি বাজেটেই শিক্ষা খাতের সঙ্গে প্রযুক্তি, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসহ নানাবিধ খাত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বরাদ্দকৃত স্বল্প অর্থটুকুও ভাগাভাগি হয়ে যায় অন্যান্য খাতের সঙ্গে।।

ইয়েমেন সরকারী ব্যয়ের ৩২.৮% ব্যয় করে শিক্ষাখাতে ।। থাইল্যান্ডও রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ২৮.৩% ব্যয় করে শিক্ষাখাতে। দরিদ্ররাষ্ট্র ভানুয়াতু ব্যয় করে> ২৮.১%, বতসোয়ানা> ২৫.৬%, কেনিয়া>২২.১%; বুরুন্ডি> ২১.৮%......।। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের মাত্র> ১২% আমরা শিক্ষাখাতে ব্যয় করি ।।
[[http://www.nationmaster.com/graph/edu_edu_spe_as_per_of_tot_gov_exp-education-spending-total-government-expenditure]]

শিক্ষাখাতে বরাদ্ধের আরো একটি সূচক গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো শিক্ষার্থীপিছু রাষ্ট্রগুলোর ব্যয়।।ইউরোপের ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ শিক্ষার্থী পিছু ব্যয় করে> $ ১৭৫০০; নরওয়ে> $১৩৭০০; ডেনমার্ক> $১১৯০০; সুইজারল্যান্ড>$১১,২০০।। আমাদের বড়জোর স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে (ক্যাডেট/ সরকারী/ বেসরকারী) > $২২; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য> $৭০; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপিছু> $৩৭৫ !! তারপরও আমরা ডিজিটাল-ফিজিটালের স্বপ্ন দেখি।।
[http://www.realonlinedegrees.com/education-spending-gdp-around-the-world/]

আমি বলছি না, কিউবা/ নরওয়ে/ যুক্তরাষ্ট্র/ লুক্সেমবার্গ/ সুইজারল্যান্ড/ সিঙ্গাপুরের মতো দেশের অনুরূপ বরাদ্দ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এখনি দিতে হবে। কিন্তু মোট জিডিপি’র ৪% (৩৮৪১০ কোটি ) বরাদ্ধের দাবি তোলা যায়।। সরকার আমেরিকা থেকে যুদ্ধবিমান কিনছে হাজার কোটি টাকায় । ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে। ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের পরিকল্পনা করছে...........।।।

কেবল শিক্ষার নাম নিলে বাজেটের দরিয়া শুকিয়ে যায় ।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন